
সারা দিন বেচাকেনা করে রাতে ঘুমাতে বাড়ি গিয়েছিলেন মুদিদোকানি জাবেদ হোসেন। সকালে ফিরে এসে দেখেন তাঁর দোকানের পেছনের দরজা ভাঙা। তছনছ করা হয়েছে দোকানের ভেতরে। চোরের দল নিয়ে গেছে দোকানে থাকা পাঁচ হাজার টাকা, দুটি সাইকেল ও বেশ কিছু মালামাল।
জাবেদ হোসেনের দোকানটি অবস্থিত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের ধোপারহাটে। দোকানের অদূরেই তাঁর বাড়ি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর দোকানসহ সন্দ্বীপের অন্তত আটটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে।
দোকানে এ ধরনের চুরির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে সন্দ্বীপে। গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এক মাসে উপজেলায় অন্তত ৬১টি চুরির ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তবে এসব চুরির ঘটনায় একজনকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
৬১টি দোকান ছাড়াও উপজেলার একাধিক বাসাবাড়িতেও চুরির ঘটনার ঘটেছে। এ ছাড়া পাওয়া গেছে মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা চুরির অভিযোগ। তবে এত চুরির ঘটনা ঘটলেও সন্দ্বীপ থানায় ২৮ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চুরির মামলা হয়েছে মাত্র একটি। সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে দুইটি। মামলা ও সাধারণ ডায়েরির তথ্য সন্দ্বীপ থানায় নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।
মামলা না হওয়ার বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, তাঁদের অনেকেই মামলা করতে গিয়ে পুলিশের অসহযোগিতার কারণে মামলা করতে পারেননি। থানায় গেলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় চুরির মামলা না করে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য। তাই তাঁরা থানামুখী হচ্ছেন না।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে সংঘটিত আটটি চুরির ঘটনার মধ্যে দুইটি হয়েছে ধোপার হাটে। এ ছাড়া দীর্ঘপাড় ইউনিয়নের তিনটি দোকান ও মাইটভাঙ্গার তিনটি দোকানে চুরি হয়।
এর আগে গত মঙ্গলবার এক রাতেই বাণীর হাট বাজারে চুরি হয় ১৬টি দোকানে। ২০ জানুয়ারি শিবের হাটের দুইটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই রাতে পৌরসভার একটি বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও চুরি হয়। ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই রাতে চুরি হয় উপজেলার ৩৫টি দোকানে।
সন্দ্বীপে বাজার রয়েছে প্রায় ৫৫টি। এসব বাজারের দোকানিরা বলছেন, চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের অনেকটাই নির্ঘুম রাত কাটছে। দোকানে কখন চুরি হয়, সেই শঙ্কায় থাকেন তাঁরা।
চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীও শঙ্কিত। সম্প্রতি চুরির ঘটনা বাড়ার বিষয়টি সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়ে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে সন্দ্বীপ অধিকার আন্দোলন নামের স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পুলিশের দাবি, রাতে দোকানপাটে চুরি করে চোরাই পণ্য ও টাকাপয়সা নিয়ে নৌপথে পাশের উপজেলাগুলোতে চলে যায় চোরের দল। যে কারণে তাঁদের ধরা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া থানায় জনবল-সংকট অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় বাধা। থানায় ৩৮ জন কনস্টেবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ২২ জন।
সন্দ্বীপে টহল ডিউটি করার জন্য যানবাহন রয়েছে মাত্র দুইটি। এর বাইরে দুইটি অটোরিকশা ও দুইটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় পুলিশ সদস্যরা টহল দেন। তাই ৫৫টি বাজারসহ পুরো থানা এলাকা সব সময় নজরদারিতে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে চুরি ঠেকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। নিয়মিত টহলসহ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ বি এম নাহিনুল বারী বলেন, সন্দ্বীপ থানার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ চাওয়া হয়েছে। নতুন করে ১১ জন জনবল সেখানে সম্প্রতি যুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে।