
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হতে পারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের কমিটি।কে হতে যাচ্ছেন সেই কমিটির শীর্ষ দুই পদের মালিক?
এ নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ তো আছেই, সাধারণ্যেও কৌতূহলের শেষ নেই। এই কৌতূহল মেটাতে যুবলীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলেছেন একুশে পত্রিকা প্রতিবেদক।
অনুসন্ধান বলছে,নগর যুবলীগের আসন্ন কমিটিতে শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য আলোচনায় যারা আছেন তারা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক,সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত এমএ মান্নানের ছেলে দিদারুল আলম দিদার,চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য দিদারুল আলম,এম আর আজিম,দেবাশীষ পাল দেবু,আরশেদুল আলম বাচ্চু ও আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
মূলত আ জ ম নাছির উদ্দীন ও এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী(পরবর্তীতে হাল ধরেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল)এই দুই ধারা বা বলয় থেকেই সব সময় নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে থাকে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে।এবারও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে দুই ধারার সমন্বয়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সভাপতি পদের জন্য হাইকমান্ডে সবচেয়ে আলোচিত এম এ মান্নান-তনয় দিদারুল আলম দিদার উক্ত দুই ধারার কোনোটিতেই নেই।পিতৃপরিচয় ও নিজের যোগ্যতায় পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন দিদার। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএফ)পূর্বাঞ্চলের কমান্ডার এম এ মান্নান মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি করেছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে।
বর্তমান যুবলীগের নেতৃত্বে আছেন শহীদ শেখ মনির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ।শেখ মনির সহোদর যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ সেলিমও এম এ মান্নানের ঘনিষ্ঠজন।তার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ ফজলে নাঈমও এখন আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক তথা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণজন।তাছাড়া চট্টগ্রামের রাজনীতিতে অনেকটা অবহেলিত এম এ মান্নানের সন্তানেরা।গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদেই তারা নেই।
এসব মিলিয়ে সভাপতি পদের জন্য মান্নানপুত্র দিদারকেই কেন্দ্রীয় কমিটি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন বলে জানা গেছে।গেলো সম্মেলনের আগে দিদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে বলে দেওয়া হয় সম্মেলনে তার মিছিল যেন অন্যদের চেয়ে বড় হয়।দিদার তা-ই করেছেন।চেষ্টা করেছিলেন বড়ধরনের শোডাউন ও মিছিল করতে।
এদিকে দিদারের পাশাপাশি সভাপতি পদে কেন্দ্রে আলোচনায় আছেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য দিদারুল আলম,দেবাশীষ পাল দেবু,নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম আর আজিম।
এর মধ্যে স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য দিদারের নাম সরাসরি প্রস্তাব করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নিজেই।আগামী কিছুদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পৃথক পৃথকভাবে এ নিয়ে আ জ ম নাছির ও নওফেলের সঙ্গে বসবেন বলে জানা গেছে।
সভাপতির জন্য কেন্দ্রে দিদারের নাম প্রস্তাব করলেও সাধারণ সম্পাদক পদে এখনো আ জ ম নাছির কারো নাম প্রস্তাব করেননি।তবে সাম্প্রতিক সময়ে সম্মেলন উপলক্ষে সাংগঠনিক তৎপরতা দেখে শেষ পর্যন্ত পলিটেকনিক্যাল এলাকার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের নাম প্রস্তাব করতে পারেন আ জ ম নাছির।এমনটা জানা গেছে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে।এদিকে নাছিরের প্রস্তাবিত দিদার সাংগঠনিক ভিত্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও একটা ভালো অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন ইতোমধ্যে।
অন্যদিকে নওফেল বলয় থেকে সভাপতি,সাধারণ সম্পাদকের জন্য আলোচনায় আছেন যথাক্রমে এম আর আজিম ও এমইএস কলেজ ছাত্রসংদের সাবেক জিএস ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চু,বাচ্চুর আছে অন্য অনেকের চেয়ে ব্যাপক কর্মীসমর্থক। বাচ্চু ডাক দিলেই মুহূর্তের মধ্যে হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক জড়ো করতে পারেন।এই সক্ষমতা তিনি বিভিন্ন সময় দেখিয়েছেন।জানা গেছে,দক্ষ সংগঠক হিসেবে বাচ্চুর সুখ্যাতির বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে কেন্দ্রে।
এছাড়া নাছির-নওফেলের সরাসরি আশীর্বাদ না থাকলেও নিজ যোগ্যতায় চট্টগ্রামে সার্বিকভাবে সুসংগঠিত সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা দেবাশীষ পাল দেবু।যুবলীগের আগের কমিটির সদস্য থাকার সুবাদে চট্টগ্রাম বন্দর-পতেঙ্গায় বিপুল কর্মী-সমর্থক গড়ে তুলতে সক্ষম হন তিনি।বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কাজকর্মে তার রয়েছে নিবিড় সম্পৃক্ততা।এসব কারণে কেন্দ্রের আলোচনায় তিনিও আছেন গুরুত্বপূর্ণ পদে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে,এম এ মান্নান পুত্র দিদারুল আলম যদি শেষ পর্যন্ত যুবলীগের সভাপতি হন,সেক্ষেত্রে ছাত্রলীগ স্টিয়ারিং কমিটির দিদারুল আলম,এম আর আজিম,দেবাশীষ পাল দেবু, আরশেদুল আলম বাচ্চু,আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন থেকে যে কেউ সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন।
তবে বিদায়ী কমিটির যুগ্ম আহ্ববায়ক দিদারুল আলম দিদারকে ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে নওফেল ব্লক থেকে সভাপতি পদ প্রত্যাশী একটি অংশ।জানা গেছে,তারা প্রতিনিয়ত দিদারকে অযোগ্য প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দিদারের কোনো কর্মী নেই,সাংগঠনিক ভিত্তি নেই, নেই টাকা পয়সা,দিনের ১২টায় ঘুম থেকে উঠেন এসব কেন্দ্রের কাছে নামে-বেনামে বলে দিদারের সম্ভাবনা ম্লান করে দিতে চাইছে ওই মহলটি।
যদি এসব অপপ্রচার প্রপাগাণ্ডার কারণে দিদার শেষ পর্যন্ত ছিটকে পড়ে তাহলে নাছির ও নওফেল ব্লক থেকেই যথাক্রমে সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সূত্র।
এছাড়া সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক পদে যারা সিভি দিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে অনেকে যাচাই বাছাই শেষে সহ সভাপতি,যুগ্ম সম্পাদক,সাংগঠনিক সম্পাদক ও সম্পাদকীয় পদে জায়গা পাবেন বলে জানিয়েছে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সূত্র।তবে আর যাই হোক,চাঁদাবাজ,মাদকাসক্ত,ইয়াবা ব্যবসায়ী কেউই শেখ ফজলে শামস পরশের যুবলীগে ঠাই পাচ্ছেন না এটা অনেকটা নিশ্চিত বলে জানা গেছে।