
চট্টগ্রাম মহানগরীতে গত চার দশকে ১২০টি পাহাড় বিলুপ্ত হয়েছে।৪০ বছর আগে পাহাড় ছিল ২০০টি, যার ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ)১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে।শনিবার(১৩ আগস্ট)দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামের ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের যৌথভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন বক্তারা।জঙ্গল সলিমপুরসহ চট্টগ্রামের সব পাহাড় সংরক্ষণ ও নদী রক্ষার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন,ইংরেজ শাসনের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরে চট্টগ্রামে পাহাড়ের সংখ্যা কমেছে।স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে।একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি।এরপরের ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন।
২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়,বেশিরভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী,খুলশী,বায়েজিদ,লালখান বাজার মতিঝরনা,ষোলশহর ও ফয়’স লেকে।১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৭৬ সালে নগরের পাঁচ থানা এলাকায় মোট পাহাড় ছিল ৩২ দশমিক ৩৭ বর্গকিলোমিটার।২০০৮ সালে তা কমে হয় ১৪ দশমিক শূন্য দুই বর্গকিলোমিটার।এ সময়ে ১৮ দশমিক ৩৪৪ বর্গকিলোমিটার পাহাড় কাটা হয়।এটা মোট পাহাড়ের প্রায় ৫৭ শতাংশ।নগরের বায়েজিদ,খুলশী, পাঁচলাইশ,কোতোয়ালি ও পাহাড়তলী থানা এলাকায় এসব পাহাড় কাটা হয়।সবচেয়ে বেশি ৭৪ শতাংশ কাটা পড়ে পাঁচলাইশে।
অপর এক গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়,৪০ বছর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০০ পাহাড় ছিল,যার ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।সিডিএ ১৫টি পাহাড় কেটে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে।বায়েজিদ থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত বাইবাস সড়কের আশপাশে পাহাড় কাটার উৎসব শুরু হয়।প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পাহাড়গুলো প্রতিনিয়ত কেটে কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে।দেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্ণফুলী,হালদা ও সাংগু নদী আজ দখল,দুষণ,ভরাট,চর জাগা এবং পরিকল্পিত ড্রেজিং না করায় ভয়াবহ হুমকির মুখে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়,শহরের অতি নিকটে জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগর এলাকা।এখানে সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় ছিল তিন হাজার ১০০ একর।কিন্তু গত দুই যুগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জনের চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী চট্টগ্রামের এই জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগর এলাকার পাহাড় কেটে আলাদা এক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে। গড়ে তুলেছে দেশের ভেতরে আরেক দেশ।তাদের সহযোগী হিসেবে আছেন আরও অন্তত ৩০০ জন দখলদার বাহিনী।এই ভূমিদস্যুরা ২০০০ সাল থেকে যখন যে দল ক্ষমতায় ছিল, তখন সে দলের ব্যানার টাঙিয়ে নিজেদের সাম্রাজ্য সুদৃঢ় করেছে। তারা প্রতিনিয়ত সরকারে খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড় কেটে প্লট বানিয়ে হাজার হাজার ছিন্নমূল মানুষের কাছে ভাড়া কিংবা দখল বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একাধিক তথ্যে জানা যায়,জঙ্গল সলিমপুরে আট হাজার পরিবারে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসবাস।তবে সম্প্রতি আদমশুমারিতে ১৯ হাজার মানুষের তথ্য মিলেছে।ওই এলাকায় থাকতে হলে সমিতির সদস্য হতে হতো।মেনে চলতে হতো সমিতির নিয়ম-কানুন।কাজের সুবিধার্থে তাই পুরো এলাকাকে ১১টি সমাজে ভাগ করা হয়েছে।কোথায় কোন পাহাড় কাটা হবে,কোন সড়ক তৈরি হবে,কখন কে সরকারি সাহায্য পাবে তা নির্ধারণ করেন ১১টি সমাজের ১১ শীর্ষ ব্যক্তি।অভিযোগ রয়েছে,মশিউর ও সাদেকের সহযোগী হিসেবে কাজ করছিল ওই ১১ জন।
সংবাদ সম্মেলনে পাহাড় কাটায় জড়িতদের গ্রেফতারসহ সাত দফা দাবি পেশ করা হয়।এতে আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট)সাবেক উপাচার্য প্রফেসর মোজাম্মেল হক,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাসের সভাপতি চৌধুরী ফরিদ প্রমুখ।