
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিকবার হামলা হয়েছে,সেজন্য তাঁর নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকেই যায়।সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শোক দিবসের অনুষ্ঠানে দৃশ্যমান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি অদৃশ্য ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি)কমিশনার শফিকুল ইসলাম।রোববার(১৪ আগস্ট)শোক দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর কেন্দ্রীক নেওয়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
ডিএমপি কমিশনার বলেন,বাংলদেশের কেন,পৃথিবীর এখন যারা প্রধানমন্ত্রী আছেন,সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকেন তিনি(শেখ হাসিনা)। তাঁকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।যারা হামলার পরিকল্পনা করেছিলো,তারা প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার জন্য সব চেষ্টাই করেছে।আমার বিশ্বাস আল্লাহ তাঁর হায়াৎ রেখেছেন,তাই তিনি আমাদের মধ্যে আছেন।না হলে তাঁর বেঁচে থাকার কথা নয়।
এ দিকটা মাথায় রেখে সবসময়ই তাঁর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকি।প্রধানমন্ত্রী যতদিন থাকবেন,বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের যতদিন অস্তিত্ব থাকবে ততদিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসবেন।তাই যারা ষড়যন্ত্র করতে চায় তারা চাইলে ১০ বছর ধরে পরিকল্পনা করতে পারে।তাই বিষয়টা মাথায় রেখে,দেশীয়-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট,নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয় মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে।যোগ করেন ডিএমপি কমিশনার।
তিনি বলেন,ভিভিআইপি নিরাপত্তার বিষয়ে খুব বেশি প্রকাশের সুযোগ থাকে না।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর একাধিকভার হামলা হয়েছে।তাই তাঁর নিরাপত্তার জন্য দৃশ্যমান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার পাশাপাশি বেশকিছু অদৃশ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।যেটি সবার জানার দরকার আছে বলে মনে করি না।সর্বোচ্চভাবে যেটি করা সম্ভব সেই ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন,ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাঙালির আবেগের জায়গা।১৫ আগস্টের কষ্ট এবং শোকের সঙ্গে পালন করতে হাজার হাজার মানুষ ৩২ নম্বরে আসেন।সে অনুযায়ী এখানে নিরাপত্তা পররিকল্পনা গ্রহণ এবং প্রণয়ন করা হয়েছে।ভেন্যুগুলো ডগ স্কোয়াড ও মাইন ডিটেক্টরের মাধ্যমে সুইপিং করা হয়েছে।পুরো এলাকা সিসিটিভির মাধ্যমে নজরদারি করা হবে।ধানমন্ডি লেকে নৌপুলিশ ও নৌবাহিনীর পেট্রোল টিম থাকবে।দৃশ্যমান প্রতিটি জায়গায় নিরাপত্তা বলয় থাকবে।গত কয়েকদিন ধরে আশেপাশের প্রতিটি আবাসিক হোটেল ও মেসে একাধিকবার নিরাপত্তা তল্লাশি চালানো হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বনানীতে যাবেন,তাই সেখানেও একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান তিনি।
ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন,রাসেল স্কয়ারের দিক দিয়ে জনসাধারণ ৩২ নম্বরে প্রবেশ করবে এবং পশ্চিম দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে।চারদিকে নিরাপত্তা বেস্টনীর সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যারিকেড থাকবে।নির্ধারিত রুটম্যাপ অনুসরণ করে আসলে সবাই কম সময়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে চলে যেতে পারবে।এর বাইরে রোড লাইনিং,ছাদে পুলিশ সদস্য মোতায়েনসহ সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। সিটিটিসিও তাদের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।মোবাইল পেট্রোল থাকবে,মানুষজন যাতে ৩২ নম্বরে ঢোকার আগে যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি হয়,সেজন্য আর্চওয়ে,মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে।অনুরোধ করবো ব্যাগ বা ব্যাকপ্যাক নিয়ে যেন কেউ না আসেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন,আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ও সোয়য়াত টিম সবসময় প্রস্তুত থাকে।এখানে স্থাপিত কন্ট্রোলরুম থেকে সবকিছু মনিটরিং করা হবে।যাতে সার্বক্ষণিক আমরা দেখতে পারি এবং যখন যেখানে প্রয়োজন ব্যবস্থা নিতে পারি।৩২ নম্বরের চারপাশ ঘিরে নির্দিষ্ট বলয় তৈরি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, কোভিডের ঝুঁকি চলে গেছে বলতে পারি না।যারা এখানে আসবেন অনুরোধ করবো নূন্যতম নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে যেন একটি মাস্ক পরে আসেন।কারণ এখানে লাখ লাখ লোক জমায়েত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন,এখন পর্যন্ত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো হামলার তথ্য নেই।সারাদেশে পুলিশ আগস্ট মাসে সব দিক থেকে সতর্ক থাকে,কারণ এটি কলঙ্কিত মাস।এ মাসে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ সারাদেশে ৫০০ স্পটে বোমা হামলা, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে যতোটা বেশি সম্ভব সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।