
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও প্রথম শহীদ,মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরের গেরিলা বাহিনীর প্রধান এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দ আহমদের ভাতিজা সাংবাদিক ফারুক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজের নির্দেশে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে’ দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করা না হলে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দ পরিবারের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সন্তান প্রজন্ম।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তারা। এজন্য বেশ কয়েকটি কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন আয়োজকরা।এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানবন্ধন।প্রধানমন্ত্রী,মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান। কেন্দ্রীয় ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন।এবং সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা জয়নাল আবেদিন বলেন,দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের পরিবারকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান।তার লেলিয়ে দেওয়া বাহিনী ও বাঁশখালী থানা পুলিশ নিয়মিত আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আমার ছোট ভাই সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে।
লক্ষণীয় যে,এই মামলার এজাহারে বাদি মোরশেদুর রহমান নাদিম উল্লেখ করেছেন,এমপি মোস্তাফিজের নির্দেশনায় এই মামলা বাঁশখালী থানায় দায়ের করা হয়েছে।শুধু তাই নয়,মামলাটি যখন দায়ের করা হয় তখন বাঁশখালী থানার ওসি(তদন্ত)হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কামাল উদ্দিন।বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশে হামলা ও মামলাসহ নানা কারণে বদলি হওয়ার পর আবার ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে এমপিকে খুশি করতে একতরফাভাবে তড়িঘড়ি করে এই মামলার চার্জশিট প্রদান করেছেন তিনি।আগামী ১৫ দিনের মধ্যে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।তা না হলে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।এজন্য আমরা নানা কর্মসূচি এরইমধ্যে ঘোষণা করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,২০২০ সালের ২৬ জুলাই বীর মুক্তিযাদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই ও আমার বাবা বীর মুক্তিযাদ্ধা ডা.আলী আশরাফে মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান না করার পেছনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ইন্ধনদাতা হলেন বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান।একই সময়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযাদ্ধা সম্পর্কে অবমাননাকর ও আপত্তিকর বক্তব্য,বাঁশখালী ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধনে সংসদ সদস্যর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে ন্যাক্কারজনক হামলা করা হয়েছিল।এমনকি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও বিতর্কিত বক্তব্য দেন তিনি।
এসব ঘটনায় চট্টগ্রাম সহ সারাদেশের মুক্তিযাদ্ধারা এমপি মোস্তাফিজের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করা সহ বাংলাদশ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছিল।একইসঙ্গে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন পেশাজীবি,রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ব্যাপক প্রতিবাদ জানিয়েছিল।মৌলভী সৈয়দ পরিবারের সন্তান হিসেবে আমার ভাই সাংবাদিক ফারুক আব্দুল্লাহও সোচ্চার ছিলেন।কিন্তু এমপি মোস্তাফিজ রাজনৈতিকভাবে এ বিষয়কে মোকাবিলা না করে মামলা,হামলা,জেল-জুলুমের পথ বেছে নেয়।মৌলভী সৈয়দ পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন ও রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে এমপি মোস্তাফিজ তার বাহিনী দিয়ে নানামুখী অত্যাচার,নিপীড়ন চালাচ্ছে।যার ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১ আগস্ট বাঁশখালী থানায় ফারুক আব্দুল্লাহ’র বিরুদ্ধে মিথ্যা,বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করে।শুধু তাই নয়,এর আগে তিনি বাংলাদশ আওয়ামী লীগর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সম্পর্কও কটুক্তি করেছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা বলেছেন,এমপি মোস্তাফিজ একসময় জাতীয় পার্টি করতেন,এখনও জাতীয় পার্টির গন্ধ তার শরীর হতে যায়নি।২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি সাঈদীর পুত্র শামীম-বিন-সাঈদীর অনুষ্ঠানে তাঁর সম্মতিক্রমে প্রধান অতিথি হিসেবে এমপি’র পোস্টার ব্যানার সাঁটানো হয়েছিল।সেই সময়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদের মুখে পড়ে অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হননি।২০১৬ সাল ১ জুন ইউপি নির্বাচনে পছন্দের ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন এমপি মোস্তাফিজ,তা করত না পেরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল কবিরকে মারধর করার অভিযোগ পরবর্তী এই ঘটনায় মামলাও হয়েছিল।এরপর ২০১৫ সালের ১৪ নভেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভায় তার বিরুদ্ধে জামায়াত প্রীতির অভিযোগ আনে জেলা আইনজীবি সমিতির তৎকালীন সভাপতি ও আওয়ামী লীগের পরিবশ বিষয়ক সম্পাদক এড. মুজিবুল হক।এসময় মুজিবুল হকের দিকে জুতা নিয়ে তেড়ে যান এমপি মোস্তাফিজ।
তাছাড়া বাঁশখালী উপজেলা জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত।মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ঘটনায় এমপি মোস্তাফিজের মদদে জামায়াত নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছিল বাঁশখালীতে।জাতীয় দিবসে জামায়াত নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক প্রদান,জামায়াত ঘরানার লোক কাজী নিয়াগসহ জামায়াত প্রীতির অভিযোগ রয়েছে সাংসদ মোস্তাফিজের বিরুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন,এই দেশ মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগে গড়া।এখানে রাজাকার-আলবদর ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের অনুপ্রবেশকারীসহ সকল অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম।বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে নিয়ে গেছেন।কিন্তু সাংসদ মোস্তাফিজের মতো কতিপয় অনুপ্রবেশকারীর কারণে তা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।অবিলম্বে তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস না পায়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা অর্থ কমান্ড বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক,চট্টগ্রামে প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি চৌধুরী ফরিদ, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড,চট্টগ্রাম মহানগরের সদস্য সচিব রাজিশ ইমরান,মৌলভী সৈয়দের ভাতিজা ও যুবলীগ নেতা জহির উদ্দিন বাবর এবং দক্ষিণ জেলার ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল কাদের রিমন প্রমুখ।